খাবারের দোষ চর্চা…

লিখেছেন- নিশাত তামমিম

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না…..

এই একটা গুণ বা সুন্নাহ যে কত বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা যৌথ পরিবারে না থাকলে বোঝা যায়না। একটা পরিবারে যখন ভিন্ন এলাকার, ভিন্ন রুচির, ভিন্ন বয়সের অনেকগুলো মানুষ একসাথে থাকে, তখন সেখানে রাধুনির রান্না যতই ভালো হোক না কেন, সবার মুখে সব রান্না রুচবে না। এখানে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে রান্নার রেসিপি ও সিস্টেমে কিছু সহজ পরিবর্তন আনা যেতে পারে, তারপরও প্রত্যেক বেলায় কখনোই পরিবারের সবার ‘মনমতো’ হবেনা।

একই রান্না- কারো কাছে খুব মজার, কারো কাছে মুখে নেয়ার মতই না, কারো কাছে লবন বেশি ঝাল কম, কারো কাছে ঝাল বেশি লবন কম, কারো কাছে তেল কম, কারো কাছে তেল বেশি…… এমন অবস্থায় রাধুনী যতই এক্সপার্ট হোক না কেন, সব্বাইকে একসাথে খুশি করতে পারবেনা, পারা সম্ভবও না।

খেয়াল করেন, প্রত্যেক বেলায়ই যদি পরিবারের কেউ না কেউ খাবারের স্বাদ নিয়ে কোন না কোন একটা তীর্যক কমেন্ট করতে থাকেন, তাহলে ঐ রাধুনীর মন খুব অল্পদিনেই ভেঙে যাবে। কারণ, রান্না করার সময় প্রত্যেকে তার সর্বোচ্চ ইফোর্টটাই দেয়, তারপরও সবার মুখে সব খাবার ভালো লাগেনা, এখানে রাধুনীর সত্যিই করার কিছু নেই। যে বা যারা তীর্যক কমেন্ট করে অভ্যস্ত, তারা একটা সপ্তাহ আপনার নিজের পরিবারেরই রান্নার দায়িত্ব নিয়ে দেখুন, হলফ করে বলতে পারি, প্রতিদিন পজিটিভ কমেন্ট পাবেন না। তাহলে কেন অন্যের মন ভাঙছেন??

অনেকে এরকম যুক্তি দিয়ে থাকে- “ভালো/মন্দ কমেন্ট না করলে রাধুনী নিজের রান্না সংশোধন করবে কিভাবে? এজন্য খারাপ হলে খারাপ বলে দেয়াই ভালো।”

জ্বি, রান্নাতে মাত্র হাতেখড়ি দিয়েছেন, নতুন রান্না শিখছেন, তাকে শেখানোর উদ্দেশ্যে উত্তম ভাষা ব্যবহার করে সংশোধন করা যেতেই পারে। কিন্তু এই যুক্তি কখনোই রেগুলার রাধুনীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আরও রাধুনী মানুষটি যদি ভিন্ন এলাকার বা ভিন্ন পরিবারের হন, তাহলে আপনার পরিবারের রেসিপিতে রান্না করলেও ঠিক আপনার ঘরের রাধুনীর মত হবেনা। অত দূর যাচ্ছি কেন? এক পরিবারে মা আর মেয়ের রান্নাই তো সেইম হয়না। মানুষে মানুষে ন্যাচারে যে ভিন্নতা, এক হাত থেকে অন্য হাতের রান্নার স্বাদে যে ভিন্নতা, এগুলো তো নেতিবাচক কিছু না! বরং এগুলোই আল্লাহর সৃষ্টির সৌন্দর্য, সুবহানাল্লাহ! পৃথিবীর সবার রান্নার হাত যদি একই রকম হতো, তাহলে আমরা ভিন্ন স্বাদ কোথায় পেতাম? ভিন্ন বঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন রেসিপি বলেই আমরা বিভিন্ন রকম স্বাদ চেখে দেখতে পারি, এটাই তো ভিন্নতার সৌন্দর্য!

বাচ্চাদের জন্য আমাদের পারিবারিক শিক্ষাটা এমন হওয়া উচিৎ না যে, তোমার মায়ের রান্নাই শুধু ভালো। হ্যা, মায়ের রান্নার মজা অন্যরকম। কিন্তু প্রত্যেক পরিবারেই তো মা আছেন, তাদের কাছেও তো তাদের মায়ের রান্না মজার। একরকম রান্না না হলেই খেতে পারবোনা, রেসিপিতে সামান্য এদিক সেদিক হলেই মুখভঙ্গি বদলে যাবে, রান্নার স্বাদ মনমতো না হলে আগপিছ না ভেবেই একটা নেগেটিভ কমেন্ট করে বসবো, একজনের রান্নার সাথে আরেকজনের রান্নার তুলনা করবো….. এগুলো গাইরে সুন্নাতি পারিবারিক শিক্ষা। বাচ্চারা পরিবার থেকে এই শিক্ষাগুলো পেলে পরবর্তীতে নিজ পরিবারে গিয়েও ঝামেলায় পড়বে, নয়তো অন্য কাউকে প্রতিনিয়ত ঝামেলায় ফেলবে!

তাই ঘরে হোক বা রেস্টুরেন্টে, খাবারের ‘স্বাদ মনমতো না হলেও মুখ বন্ধ রাখা’র নিয়মটা পরিবারে ছোট থেকেই চালু করুন। জোর করে একটা কাজ করতে করতেও একটা সময় তা ব্যক্তিগত অভ্যাস ও পারিবারিক কালচারে পরিণত হয়। আর খাবারের দোষ না ধরার এই অভ্যাসটা স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ, অনুসরণের জন্য তার চেয়ে উত্তম আদর্শ আর কে হতে পারে? এই একটা হাদিসই মুমিনের জন্য যথেষ্ট হওয়ার কথা—

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:

ما عاب رسول الله صلى الله عليه وسلم طعاما قط، إن اشتهاه أكله، وإن كرهه تركه.

❝ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কোনো খাবারের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করেননি। ভালো লাগলে তিনি খেতেন এবং খারাপ লাগলে বর্জন করতেন। ❞ (বুখারী ও মুসলিম)।

উত্তম আখলাক: একটি ভিন্নধর্মী বিশ্লেষণ

লিখেছেন- নিশাত তামমিম

উত্তম আখলাক আসলে কোনটা? যেটা আমরা আমাদের দ্বীনি সার্কেলে প্রদর্শন করি, সেটা?

নাকি সেটাও, যেটা আমরা আমাদের পরিবার-পরিজনের সাথে দেখাই!

আখলাক তো তা-ও, যা আমরা আমাদের ঘরের খাদেম, বাড়ির দারোয়ান, গাড়ির ড্রাইভার, রিকশাওয়ালা, সিএনজিওয়ালা বা ফকির-মিসকিনের সাথে দেখাই!

এমনকি সেটাও, যা আমার শত্রুর সাথে করি!

কিন্তু মানুষ আমাদেরকে কীভাবে বিচার করে? বিচারের সময় এই পুরো দৃশ্যপটটা সে দেখতে পায়না, বরঙ দর্শক হিসেবে যে গ্যালারিতে সে বসে আছে, সে আমাদেরকে ঠিক ঐ জায়গা থেকেই বিচার করে। সে যখন প্রথম সারি (বাইরে) থেকে দেখে, তখন আমার উত্তম আচরণটাই দেখে।

সে যদি ঘরের মানুষ হয়, তখন সে ঘরের মানুষ হিসেবেই আমাকে বিচার করে।

সে যখন নিচু সারিতে, তখন হয়তো আমার নিকৃষ্ট রূপটাই তার চোখে ধরা পড়ে।

তাহলে আমরা যে কাউকে এক দু’বার দেখেই বলে ফেলি- মানুষটা মাটির মানুষ! কিংবা ঐ মানুষটা খুব বদরাগি। আমাদের এই জাজমেন্টটা আদতে কতখানি ঠিক? হতেও তো পারে, আমি যার বাইরের আচরণ দেখে মাটির মানুষ ভাবছি, তার অন্দরের আচরন আমার কল্পনার চেয়েও খারাপ। বিপরীতে যার একটা রূদ্রমূর্তি দেখে আমি তাকে খারাপ ভেবে নিচ্ছি, হয়তো সে তার সবরের শেষ সীমায় এসে আজকেই এই আচরণটা করেছে, তার স্বাভাবিক আচরণ এমন নয়!

এই ব্যাপারে আমার একটা ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ আছে —

▪️মানুষ সাধারণত সবচেয়ে উত্তম আচরণ করে তাদের সাথে, যেখানে তার ‘পাব্লিক ইমেইজ’ নষ্ট হওয়ার ভয় আছে কিংবা যেখানে তার দুনিয়াবি ‘সুযোগ-সুবিধা’ হারানোর ভয় আছে। যেমন- দ্বীনি সার্কেল কিংবা যাদের সাথে গল্প-আড্ডা বা ঘরের বাইরে ওঠাবসা হয়, কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া, যেখানে তাকে সবাই ভালো বলে জানে- এই জায়গাগুলোতে পারতপক্ষে মানুষ তার আচরনের নেগেটিভ সাইডটা প্রদর্শন করতে চায়না, এখানে সে তার ইমেজ ক্লিন রাখতে চায়। আবার অফিসের বস কিংবা নিজের চেয়ে উচু পদের কেউ- যার সাথে সম্পর্ক নষ্ট হলে দুনিয়াবি স্বার্থে টান পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। তাই এখানে মানুষ তার ‘বেস্টসেল্ফ’টাই শো করে।

▪️আচরণের দ্বিতীয় ক্ষেত্র হলো পরিবার-পরিজন। এর মধ্যে আছে- স্পাউজ, সন্তান, বাবা-মা, ছেলেবউ, শ্বশুর-শাশুড়ি ও আত্মীয়-স্বজন। এইখানে পাব্লিক ইমেজের ভয় তেমন একটা নেই; তবে যা আছে তা হলো সম্পর্ক নষ্টের ভয়, যা মানুষের সাংসারিক ভোগান্তির কারণ হয়। এই জায়গায় ভুল করার কারণে কিছু মানুষ জীবনের অর্ধেক কাটায় পরিবারের অন্য সবার অশান্তি ও মনোকষ্টের কারণ হয়ে, বাকি অর্ধেক কাটায় অন্যদের কাছে অবহেলা ও খোটা শুনে আর আক্ষেপ-আফসোস করে। যদিও পরিবারের সাথে বদ আখলাকওয়ালা লোকজনের ঘরের হাড়ি হাটেও ভাঙে প্রায়শই, তারপরও অনেকেই এটাকে গুরুত্ব দেয়না। ব্যাপারটা যেহেতু ওপেন সিক্রেট হলেও পুরোপুরি ‘ওপেন’ না, তাই এই জায়গায় উত্তম আখলাক ধরে রাখতে অনেকেই ব্যর্থ হয়। কেউ স্ত্রীর সাথে ভালো, তো বাবা-মায়ের সাথে ভালোনা, কিংবা ভাইস ভার্সা। কেউ সন্তানের কাছে ফেরেশতা তো ছেলেবউয়ের কাছে যমদূত। সম্পর্কের এই জায়গাগুলোতেও মানুষের আখলাকের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ রূপ পাওয়া যায়। আর এই মানুষগুলোর সাক্ষ্য তার পরকালের নাজাতের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এরাই তার নিকটজন।

▪️আচরণের সবচে কঠিন বা কমপ্লেক্স ক্ষেত্র হচ্ছে- অধিন্যস্ত কিংবা নিজের চেয়ে নিচু শ্রেণীর মানুষের সাথে আচরণ। এই জায়গাটাতে না আছে পাব্লিক ইমেজের ভয়, না আছে সম্পর্ক নষ্টের টেনশান, না আছে দুনিয়াবি প্রাপ্তিতে টান পড়ার আশংকা। কাজের লোক, দারোয়ান, ড্রাইভার, রিকশাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা, ফকির, মিসকিন, দুর্বল, গরিব, অনাথ, ইয়াতিম…. এদের সাথে খারাপ ব্যবহার করলে আদতে মানুষের কাছে কোন জবাবদিহিতা নেই। তাই এই জায়গাটাতেই মানুষ তার উত্তম আখলাক ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় ৯৫ ভাগ বা তারও বেশি। দ্বীনি সার্কেলে কিংবা পরিবারের কাছে একদম সাচ্চা মাটির মানুষটিও এই জায়গায় এসে সাক্ষাৎ শয়তানের রূপ ধারণ করতে পারে, যা অন্যদের কল্পনাতেও নাই। এই জায়গাটায় মানুষ সবচে বেশি ফেইল করবে বলেই হয়তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা জীবন নিজে তার অধিন্যস্তদের সাথে সর্বোত্তম ব্যবহার করে দৃষ্টান্ত দেখিয়ে গেছেন। এমনকি মৃত্যুর সময়ও তিনি যে দুইটি বিষয়ে আল্লাহকে ভয়ের ব্যাপারে সাবধানবাণী দিয়ে গেছেন, তার মধ্যে একটা হলো, অধিন্যস্তদের হক্ব- وما ملكت ايمانكم।

▪️এই প্রত্যেকটা ক্যাটাগোরির সাথে আচরনের আবার দুটো নেগেটিভ হালত আছে- প্রচণ্ড রাগ অবস্থায় আচরন আর শত্রুর সাথে আচরণ। রাগ হলে আমাদের আচরণ স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে যায়, এটা খুব স্বাভাবিক ও সত্য। তেমনি সবচে ভালো মানুষটির মেজাজও শত্রুকে দেখলে বিগড়ে যায়। কিন্তু সেই নিচে নেমে যাওয়ার পর্যায়টা কত? রাগের মাথায়ও আমি আমার ‘সেন্স’ ধরে রাখতে পারি কিনা, নাকি একেবারে বেহুশ বা অমানুষের মত আচরণ করি? শত্রুর সাথে আচরনেও আমি অন্তত ‘ইনসাফ’ করতে পারি কিনা? অপরপক্ষকে যা ইচ্ছা তাই বলি কিনা, তার মান-সম্মানের কথা ভুলে গিয়ে? রাগের মাথায় গালি-গালাজ করি কিনা? (এইটা মুনাফিকের একটা লক্ষণ) রাগের মাথায় বিপরীত পক্ষের গায়ে হাত তুলে ফেলি কিনা? রাগে অন্ধ হয়ে অন্যকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে ফেলি কিনা? আবার রাগ পড়ে যাওয়ার পর নিজের ভুল বুঝতে পেরে লজ্জিত বা ক্ষমাপ্রার্থী হই, নাকি নিজের ভুল জেনেও জিদের বশবর্তী হয়ে ‘গো’ ধরে থাকি? একবার রাগ হলে দিনের পর দিন, সপ্তাহ, মাস চলে গেলেও আমার রাগ কমেনা, আমি কোনভাবেই বিপরীত পক্ষকে মাফ করতে পারিনা, এমন হয় কিনা??

তাহলে দেখুন, আমাদের আখলাকের আসলে কত রকমফের— স্থানভেদে, ব্যক্তিভেদে, সময়ভেদে! আমার মতে উপরের এই ৩ ক্যাটাগরিতে আর ২ হালতে (রাগী অবস্থায় ও শত্রুর সাথে) আমাদের আচরণের গড় মানই আমাদের সত্যিকার ‘আখলাক’। অর্থাৎ,

১. অফিসের বসের সামনে/ দ্বীনি সার্কেলে/ ফেইসবুকে/ বন্ধুমহলে আমার আচরণ ১০০ এর মধ্যে কত?

২. স্ত্রী/স্বামী, মা-বাবা, শ্বশুর-শাশুড়ি/ছেলেবউ, ভাই বোন ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে আমার আচরণ ১০০ এর মধ্যে কত?

৩. কাজের লোক, ড্রাইভার, দারোয়ান, রিকশাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা, ফকির-মিসকিন কিংবা সম্মান ও সম্পদের আমার চেয়ে নিচু শ্রেণীর মানুষের সাথে আমার আচরণ ১০০ এর মধ্যে কত?

৪. স্বাভাবিক অবস্থায় আচরনে যদি আমি ১০০ পাই, তাহলে চূড়ান্ত রাগান্বিত অবস্থায় অথবা শত্রুর সাথে আমার আচরণের পাব্লিক ভ্যালু ১০০ তে কত পাওয়ার মত?

👉 এই ৪০০ মার্ক্সের মধ্যে প্রত্যেকটায় যদি আমি অন্তত ৮০ র উপরে পাই, তাহলে আমাকে মোটামুটি আখলাক্বওয়ালা বলা যেতে পারে। টার্গেট তো আমাদের ৯০-১০০ হওয়া উচিৎ- এমন নবীর উম্মত আমরা, আখলাকে যিনি ছিলেন সারা মানবজাতির আদর্শ। কিন্তু কোন একটাতেও তার কম হলে, অথবা কোন এক দুইটাতে মার্ক খুব খারাপ হলে আমার নিজেকে নিয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। প্রত্যেকটা সেকশানে ইন্ডিভিজুয়ালি পাস করতে হবে। কারণ এই বিষয়টা বান্দাহর হক্ব সংশ্লিষ্ট, একজনের হক্ব নষ্ট করে আরেকজনের সাথে অতি বিনয়ী হয়ে কম্পেনসেট করার কোন সুযোগ নেই। যার সামনে আমি বিনয়ী, সে হয়তো আমাকে ভালোই জানবে, কিন্তু যার সাথে আচরনে আমি হক্ব নষ্ট করার পর্যায়ে চলে গেলাম, তার হক্ব তাকে কড়ায়গণ্ডায় ফিরিয়ে দিতে হবে আমাকেই!

(এই নাম্বারিং করার ব্যাপারটা আমার কাউকে দেখানোর প্রয়োজন নেই, এই এসেসমেন্টটা আমার নিজের করা উচিৎ নিজের সাথে, অনেস্টির সাথে। নিজের প্রয়োজনেই নিজের হিসাব মিলিয়ে দেখা উচিৎ, কোন জায়গায় আমার উন্নয়ন দরকার। কারণ আমার কবর, আমার হাশর আমার একারই। বুদ্ধিমান তো সে, যে আসল হিসাবের আগে নিজের হিসাব মিলিয়ে নেয়।)

👉 তবে একটা ব্যতিক্রম আছে- পৃথিবীর সবচে আখলাকওয়ালা মানুষটিরও শত্রু আছে, যে উমার রাদিআল্লাহু আনহুকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, তার পরে নবী হলে তিনিই হতেন; সেই উমারেরও শত্রু ছিলো, তাকেও অনেকে অপছন্দ করতো, তিনিও নিহত হয়েছিলেন আততায়ীর হাতে। যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সমাজের আল-আমীন, সেই তিনিই হক্বের ঝাণ্ডাবাহী হওয়ার পর হয়ে যান পুরো সমাজের শত্রু, হতে হয় স্বদেশ বিতাড়িত। তাই,

√ হক্বের দাওয়াত দিতে গেলে,
√ সৎ কাজের আদেশ ও
√ অসৎ-অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে

কিছু মানুষ শত্রু হবেই, কিছু মানুষের বিরাগভাজন হতেই হবে। এই বিষয়টাকে আমরা যেন মন্দ আখলাকের পাল্লায় না ফেলি। ভালো-মন্দ সবার কাছেই ভালো, এমন গোলআলু-মানব ইসলামের আদর্শ নয়, হক্বের পক্ষে যুদ্ধ ঘোষণা করে বাতিলের দুশমন হওয়াই বরং ইসলামের আদর্শ। এরকম কিছু মানুষের কাছে খারাপ বা শত্রু হওয়া মন্দ আখলাকের পরিচয় নয়, তবে আমাকে খেয়াল রাখতে হবে- আমি দাওয়াতে দ্বীনের কাজে নববী আদর্শ অনুসরণ করছি, নাকি নিজের খাহেশাতকে প্রাধান্য দিচ্ছি। যেখানে নরমেই সম্ভব, সেখানে অকারণ গরম দেখিয়ে সম্পর্ক নষ্ট করার প্রয়োজন নেই।

ফিরে আসি আগের কথায়। বলছিলাম যে, নিজের আখলাক সুন্দর করা শুধু ব্যক্তিগত উন্নয়নের বিষয় নয়, বরং এই একটা বিষয়ে অসচেতনতা হতে পারে আমার জাহান্নামের কারণ। কারণ, এই বিষয়টা “হাক্কুল ইবাদ”, তথা বান্দাহর হক্বের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর হক্ব এমনকি নামায, রোযা, হজ্জ এসবের গুনাহও আল্লাহ চাইলে মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু বান্দাহর হক্ব নষ্ট হলে তা কেবল বান্দাহই মাফ করতে পারে, আর কেউ নয়। আমার মন্দ আখলাকের কারণে কেউ মজলুম হলে বা কষ্ট পেলে তাতে বান্দার হক্ব নষ্ট হয়, যার প্রত্যেকটা আমাকে বুঝিয়ে দিতে হবে, এই জীবনে অথবা হাশরের ময়দানে। নফল ইবাদাতে একটু কমতি থাকাও ভালো, মন্দ আখলাকের অধিকারী হওয়ার চেয়ে, বান্দাহর কিছু হক্ব নষ্ট করে মারা যাওয়ার চেয়ে। এ কারণেই হাদিসে এসেছে-

❝সেই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সবচে বেশি সম্মানিত, যার আখলাক সর্বোত্তম।❞

❝জান্নাতে সর্বোচ্চ আসনের গ্যারান্টি তার জন্য, যার আখলাক সুন্দর।❞

❝মানুষকে যে গুণটা সবচে বেশি জান্নাতে নেবে, তা হলো উত্তম আখলাক।❞

একটা কথা আছেনা? মানুষকে চেনা যায় সফরে, লেনদেনে, দুঃসময়ে। কারণ এই পরিস্থিতিগুলোতে মানুষকে বিভিন্ন সারির দর্শকের সামনে আসতে হয়, বিভিন্ন হালতে আসতে হয়- কখনো ঠাণ্ডা মাথায়, কখনোবা রাগান্ত্বিত বা বিরক্ত অবস্থায়।

আর এই সবগুলো হালতে, সবগুলো ক্যাটাগরিতে ‘উত্তম আখলাক’ বজায় রাখার পিছনে নিয়ামক হতে পারে একমাত্র – আল্লাহর ভয় (তাক্বওয়া) ও সুন্নাতের অনুসরণ (ইত্তেবায়ে সুন্নাত)। তা বাদে জাগতিক কোন মোটিভেশান একজন মানুষকে সবগুলো ক্যাটাগরিতে উত্তম আচরণে উদ্বুদ্ধ করতে পারেনা, অসম্ভব!

আল্লাহ আমাদেরকে সত্যিকার’ হুসনুল খুলুক’ এর অধিকারী হওয়ার তাউফীক দিন।

দাওয়াতি এপ্রোচ: কার জন্য কেমন?

লিখেছেন: নিশাত তামমিম

দাওয়াতি এপ্রোচে মাদ’ঊর অবস্থাভেদে পার্থক্যের একটা ফাইন লাইন অনেকেই বোঝেনা। সেটা কী, জানেন?

নায়িকা মৌসুমী হোক বা দ্বীন প্র‍্যাক্টিস করেনা এমন যে কেউ হোক, সে যদি শাড়ির উপর সামান্য হিজাবও মাথায় দেয়, আমি তাকে আহলান সাহলান বলে বুকে জড়িয়ে নেবো।

বিপরীতে আপনি যদি এমন দ্বীনি ঘরানার কেউ হন, যিনি এত বছর হিজাব-নিক্বাব সহ পূর্ণ পর্দা করে চলেন, দ্বীনের সব বিষয় জানেন বোঝেন; আপনি হুট করে হিজাব-নিক্বাব সব ছেড়ে দিয়ে শাড়ির উপর হিজাব পরা শুরু করেন, আপনার কি মনে হয় আপনাকেও আহলান-সাহলান বলে বুকে জড়িয়ে নেয়া উচিৎ?

এই দুই এপ্রোচের পার্থক্যে অনেকেই বোঝেনা, না বুঝেই অনেকের উপর কট্টোরতার তকমা লাগিয়ে দেয়। অথচ উপরের দুইটি সিনারিওতে প্রথম জন দ্বীন জানেনা, সে দ্বীনের পথে আসতে চাচ্ছে। দ্বিতীয়জন দ্বীন জানে, এতদিন পালনও করতো, অথচ জেনেবুঝে এখন সে মডার্নিজমের পথে হাটছে। ‘যে জানে আর যে জানেনা, উভয়ে কি সমান?’ দুজনেরই বর্তমান অবস্থান সেইম হলেও একজনের গতি ধনাত্মক, সে দ্বীনের দিকে আসছে, আরেকজনের গতি ঋণাত্মক, সে দ্বীন ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পথ ধরেছে। জ্বি, একজন দা’ঈর জন্য এই দুইজনই মাদ’ঊ, তবে এই দুইজনের ব্যাপারে দাওয়াতি এপ্রোচ কখনোই এক হবেনা।

এই এপ্রোচ রাসূল সা. ও সাহাবায়ে কেরামের জামানায়ও এক ছিলোনা। ইসলামে আসার পর যারা যাকাত দিতো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তারা যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন অন্যান্য সাহাবীরা কেউ কেউ এটা মেনে নেয়ার পক্ষে মত দিলেও আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু কী বলেছিলেন, মনে আছে? উনার মত কোমলপ্রাণ খলিফা পর্যন্ত যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন- আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবো, যতক্ষণ না তারা যাকাত দিতে স্বীকৃত হয়।

বিপরীতে নতুন যারা ইসলামে আসছে, তাদের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এপ্রোচ কেমন ছিলো? মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যখন দাওয়াতের উদ্দেশ্যে ইয়েমেন পাঠাচ্ছিলেন, তখন তিনি একটা লম্বা উপদেশ দিয়েছিলেন। কী বলেছিলেন? মুয়াজ, তুমি যে এলাকায় যাচ্ছো, প্রথম তাদের কালেমার দাওয়াত দেবে। কালেমা গ্রহণ করলে তারপর সালাতের দাওয়াত দেবে। সালাতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তাদের সিয়ামের দাওয়াত দেবে….

তার মানে কি এই যে, যারা মডার্নিজমের পথে হাটছে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবো? মোটেও না। তবে তাদেরকে আহলান সাহলান বলে মডার্নিজমের পথে এগিয়েও দেবোনা। তাকে ইসলামের কঠোরতার দিকগুলো দরদ নিয়ে বোঝাবো, সে যে ভুল পথে হাটছে তা তাকে উত্তম উপায়ে নসীহত দিয়ে বুঝাতে চেষ্টা করবো।

তবে সমস্যা হলো, এই দ্বিতীয়শ্রেণীর মানুষেরা যেহেতু দ্বীন বোঝেন, জানেন, তাই এই পর্যায়ে এসে তারা আর কারও নসীহত গ্রহণের অবস্থায় থাকেন না। একদিকে তারা দ্বীনের ব্যাপারে নিজের বুঝের সাথে খাহেশাতের মিশেলে মুজতাহিদ সেজে বসেন, নিজেরাই মডার্নিজমের প্রচারক বনে যান। অন্যদিকে যারা উত্তম নসীহত করতে আসে, তাদের দিকে কট্টরপন্থীর তকমা ছুড়ে দিয়ে নিজের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করেন।

যাহোক, তবে শেষ কথা হলো, উভয়েই মাদ’উ। দাওয়াতের এপ্রোচ ভিন্ন হলেও উভয়কেই দরদ নিয়ে বুঝাতে হবে, উভয়ের হেদায়াতের জন্যই আল্লাহর কাছে দুয়া করতে হবে, আর নিজেরাও যেন দ্বীনের উপর টিকে থাকতে পারি তার দুয়া চালিয়ে যেতে হবে।

Troubleshooter or maker??

লিখেছেন- নিশাত তামমিম

যে বিষয়টা আপনার জন্য সহজ করে দেয়া হয়েছে, সেটা আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া নেয়ামত, তার জন্য শুকরিয়া জারি রাখুন।

যে বিষয়টা আপনার জন্য কঠিন করে দেয়া হয়েছে, সেখানে সবরের পথ অবলম্বন করুন, এই কাঠিন্যের পেছনেও আল্লাহ তা’আলার কোন হিকমত আছে, কোন কল্যাণ আছে, সেটা খুজে বের করার চেষ্টা করুন। শোকরগুজার হওয়ার রাস্তা পেয়ে যাবেন।

কাঠিন্যের ভিতরেও কীভাবে কল্যাণ থাকতে পারে? যেসব বিষয় আমার জন্য সহজ, সেগুলো সমাধানে করতে আমাদের তেমন বেগ পেতে হয়না। অথচ একটা বিষয়ে সমস্যার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর সমস্যাটা সফলতার সাথে কাটিয়ে উঠতে যে পারে, প্রব্লেমসলভার হিসেবে কিন্তু সেই মানুষটাই বেস্ট। তার কাছেই আমরা পরামর্শের জন্য যাই।

আমার এই ছোট্ট জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই কয়েকটা উদাহরণ দিই। ধরুন, আমি ছোট থেকেই পড়ুয়া, তার মানে পড়াশোনাকে ভালোবাসার জন্য আমাকে তেমন কসরত করতে হয়নি। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য সহজতার নেয়ামত, সম্ভবত আমাকে এই নেয়ামতের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। বিপরীতে আমার ছোট ভাইয়ের নাকি ১৫ মিনিট মন দিয়ে পড়তেও নিজের সাথে যুদ্ধ করতে হয়, এইরকম ADHD লেভেলের মনোযোগ নিয়েও সে ভালো রেজাল্ট কিভাবে করলো, এই বিষয়ে তার কাছে পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। ধরুন, আপনি একজন সিঙ্গেল মানুষ, ঘরেই থাকেন, ৩ বেলা সময়মতো নামাজ পড়ার জন্য আপনার তেমন কষ্ট হয়না। তবে যে মানুষ ৩/৪ টা বাচ্চা সামলে সময়মতো নামাজ পড়ছে, কিংবা ওটিতে ডিউটিরত যে ডাক্তারটা ওটির কাজ ম্যানেজ করেও জামাতে নামায বাদ দিচ্ছেনা, এই মানুষটার কাছে আপনি আসল পরামর্শ পাবেন কঠিন পরিস্থিতিতে নামাজ পড়ার ব্যাপারে।

আমার জীবনে আমি দেখি, মাতৃত্বের প্রতিটা স্টেইজ আমার জন্য তুলনামূলক কঠিন করে দেয়া হয়েছে। সময়গুলো সবরের সাথে পার করা কঠিন, তবে একবার পার করে ফেলার পর দেখি, ঐ স্টেইজের নানাবিধ সমস্যার মধ্য দিয়ে যারা যাচ্ছেন, তাদেরকে আমি নিজ অভিজ্ঞতা থেকে পরামর্শ দিতে পারছি। এটাই তো আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া একটা খায়ের, যেটা সহজতার পথে হতোনা। সমাধান তো সে-ই বেশি জানে, যে সমস্যায় পড়ে ঠেকে ঠেকে শিখেছে।

প্যারেন্টিং নিয়ে বিয়ের আগে থেকে পড়াশোনা করা মানুষ আমি, একটা বাচ্চা বড় করতে গিয়েই দেখলাম, প্রত্যেকটা স্টেইজে আমাকে ধাক্কা খেতে হচ্ছে, তখন বুঝলাম- দিস ইজ আ ডিফিকাল্ট চাইল্ড, একে মানুষ করতে আমাকে প্রচুর মেহনত করতে হবে, সবর করতে হবে, অন্য বাচ্চাদের সাথে তুলনা করে হতাশ হয়ে ফায়দা নেই। নতুন করে আবার বাচ্চাদের ব্রেইন ও ডিসিপ্লিন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলাম। অথচ আমার বাচ্চাটাই খুব সুবোধ বাচ্চা হলে এই কঠিন পথ আমাকে অতিক্রম করতে হতোনা, আমিও হয়তো বলে দিতে পারতাম- বাচ্চা মানুষ করা এত কঠিন না!

এই যে আমরা অনিচ্ছাসত্ত্বেও এক একটা কঠিন পথ পাড়ি দিই, কাজটা সন্তুষ্টির সাথে, জানার নিয়তে, আরও দশজন মানুষের উপকারে লাগবে, এই নিয়তে প্রচেষ্টা জারি রাখলে কিন্তু আমার একার একটা কঠিন পথের জার্নি হতে পারে আরও ১০০ জন কঠিন পথযাত্রীর জন্য মাইলফলক। ব্যাপারটা সুন্দর না?

আল্লাহর রাসূল সা. কিংবা আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের সীরাত পড়ে দেখুন- Each one of them walked through the roughest & toughest path of life….. রাসূল সা. এর জন্মের আগেই বাবা ছিলোনা, মা চলে গেলেন নাবালেগ বয়সে, প্রিয়তম দাদাও চলে গেলেন, তারপর পুরোটা জীবনই তাকে একের পর এক কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে …. কেন?? এই যে একটা কঠিনতম পথ দিয়ে আল্লাহ তাকে নিয়ে গেলেন, বিনিময়ে তাকে তিনি গোটা মানবজাতির একজন ‘প্রব্লেমসলভার’ হিসেবে সিলেক্ট করলেন- Guide/ পথপ্রদর্শক, লীডার। প্রত্যেকটা নবীকেই আল্লাহ তা’আলা একইভাবে পরীক্ষা নিয়েছেন, কঠিনতম পরীক্ষা। পরীক্ষার ফলে তারা হাল ছেড়ে দিয়ে বেসবর হয়ে যাননি, বরং সেই পরীক্ষা পার হওয়ার কঠিন পথটাই ছিলো তাদের জন্য ট্রেইনিং পিরিয়ড। নবীরা শৈশবে ছাগল চরাতেন, কেন? সেই কারণটাও আমাদের জানা, ছাগলের চেয়েও বাকা স্বভাবের মানবজাতিকে তাদের চালাতে হবে, তার প্রস্তুতি….

এই হলো আপনার উপর কোন কিছু কঠিন করে দেয়ার পেছনে আল্লাহর একটা হেকমত, আরও অনেক আছে। এখন আপনি দুটো পথই বেছে নিতে পারেন- বেসবর হয়ে আল্লাহ থেকেই দূরে সরে যাবেন, নিজের জীবনের মত অন্যের জীবনেও কাঠিন্য তৈরি করে অন্যদের কষ্ট দেবেন; অথবা সবরের সাথে কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে আপনিও একজন ছোটোখাটো প্রব্লেম সলভার হয়ে উঠবেন, বিনিময়ে অনেক মানুষের উপকার করার সুযোগ পাবেন, আল্লাহর আরও কাছে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।

❝The more trouble you face, the better troubleShooter or troubleMaker you can be!  A troubleShooter or Maker- choice is yours.❞

মুমিনের জীবনে হেরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই, পুরোটাই win-win situation, তবে দিনশেষে সফলতার পথ বেছে নেয়ার দায়টা আমাদেরই।

মন্দ আখলাক রিযিক কমিয়ে দেয়…

লিখেছেন- নিশাত তামমিম

মানুষের আখলাকের পরকালীন গুরুত্ব তো বর্ণনাতীত, তবে দুনিয়াবি গুরুত্বও যে কত, মানুষ তা নিজেই জানেনা। অনলাইন অফলাইন কত কত বিয়ের ক্ষেত্রে কতজন অমুক ভাই তমুক বোনের ব্যক্তিগত দ্বীনদারিতা ও আখলাকের খবর জানতে চান, কখনো আমার সার্কেল, কখনো আবু ফাতিমার সার্কেল থেকে খোজ নিয়ে জেনে দিই! তারা হয়তো কখনো ভাবেওনি অথবা জানেও না এ বিষয়ে, জানবেও না….

ব্যক্তিগত দ্বীনদারিতা ও আখলাক- এই ব্যাপারে কিন্তু ভার্চুয়াল ফ্রেন্ডদের কাছে খোজ নেয়া হয়না, এমন কারও কাছেই খোজ নেয়া হয়, যারা ঐ মানুষটাকে কাছ থেকে মোটামুটি লম্বা সময় ধরে চেনে। এইটা কিন্তু গুপ্তচরবৃত্তি না, এটাই বিয়ের সুন্নাহ। তার মানে আপনি নিজেও জানেন না, কোন লাইন দিয়ে কোন চেইন ধরে আপনার হাড়ির খবর আপনার ফিয়োন্সের কাছে পৌছে যাবে, কিংবা পৌছে যাবে এমন কারও কাছে, যা আপনার ধারণাতেও নেই।

একটা ছোট্ট ঘটনা শেয়ার করি, আমার ব্যাচেরই এক ছেলে নতুন দ্বীনে এসেছে, হঠাৎ করেই পোশাকে আশাকে আমূল পরিবর্তন, ইয়ো ইয়ো থেকে এক্কেবারে জোব্বা, দাড়ি, টুপি। ব্যাচমেইটদের কারও এমন পরিবর্তন দেখলে ভালো লাগে। কিন্তু সে যে ওয়ার্ডে ডিউটি করতো, সেই ওয়ার্ডে আমাদের আরও কিছু ফ্রেন্ড ছিলো। তো এক দ্বীনি জুনিয়র হঠাৎ নক দিয়ে এই ছেলেটার দ্বীনদারিতা ও আখলাকের ব্যাপারে খোজ নিয়ে দিতে বললো, বিয়ের ব্যাপারে কথা হচ্ছে। বেশভূষায় আমূল বদলে গেছে, তার মানে দ্বীনদারিতার ব্যাপারে পজিটিভ রিভিউ দিলাম। আর ওর যে ওয়ার্ডে ডিউটি সেই ওয়ার্ডে যে বান্ধবীরা ছিলো, তাদের কাছে খোজ নিয়ে জানলাম, ছেলেটা লেবাসে দ্বীনি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আখলাক নাকি ভয়ংকর খারাপ। একাধিক সোর্স থেকে এই নিউজ পাওয়ার পর “বিয়ের ক্ষেত্রে সত্য গোপন করতে হয়না” এই যেহেতু বিধান, তাই দ্বীনি ভাই হিসেবে শ্রদ্ধা করার পরও আখলাকের ব্যাপারে পাত্রীপক্ষের কাছে নেগেটিভ রিভিউ দিতে হলো। ঐখানেই ঐ বিয়ের কথাটা বন্ধ হয়ে গেলো, মেয়েটা পাত্রী হিসেবে যথেষ্ট ভালো ছিলো।

ঐদিন প্রথম আমি অনুভব করলাম, মানুষ নিজেও জানেনা, উত্তম আখলাকের অভাবে কত উত্তম রিযিক হতে সে বঞ্চিত হয়। হ্যা, উত্তম জাওয তো সবচে বড় রিযক!

আরেকটা উদাহরণ দিই- এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে, আপনি হয়তো রিকশায় উঠেছেন, রিকশাওয়ালার প্রতি আপনার কোন কারণে মায়া হলো, ভাবলেন যে নামার সময় ৫/১০ টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দিবেন। অথচ সেই রিকশাওয়ালাই নামিয়ে দেয়ার আগে আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করলো বা অন্যায্য ভাড়া চাইলো, তা নিয়ে হম্বিতম্বি শুরু করলো, আপনি কোনরকমে পাওনাটা দিয়ে চলে গেলেন। অথচ তার আরও বেশি পাওয়ার কথা ছিলো, শুধু মন্দ আখলাকের কারণেই যা হারালো!

আমরা নিজেরাও জানিনা, কার সাথে করা কোন ব্যবহার কোন দিক দিয়ে আমার তাক্বদীর বদলে দিতে পারে। কোনদিন হয়তো রিকশাওয়ালার সাথে খারাপ আচরণ করেছি, কিংবা ঘরের খাদেমার সাথে, কিংবা ব্যাচমেটের সাথে, রুম্মেটের সাথে, কিংবা প্রতিবেশীর সাথে; আমরা নিজেরাও জানিনা কোন রিপোর্ট কার কাছে কোন লিংকে পৌছে গেছে- হয়তো আমার সম্মানহানি হয়েছে এমন কারও কাছে যেটা আমি ভুলেও চাইনা, অথবা আমি এমন কিছু হারিয়েছি যা আমার পাওয়ার কথা ছিলো। তাক্বদীর তো ফিক্সড, তবে আমাদের জীবনের অনেক পাওয়া-না পাওয়ার পিছনে আমাদের নিজেদের কৃতকর্মেরও অবদান থাকে।

এইতো গেলো দুনিয়াবি হিসেব। আর আল্লাহর দৃষ্টি? কিংবা কিরামুন কাতিবীনের দফতর? সেখানে তো সামান্য কিছুও বাদ যায়না….

বাচ্চাদের বইয়ের লিস্ট

লিখেছেন- নিশাত তামমিম

অনেকে ছোট্ট বাবুদের জন্য বয়সোপযোগী বই খোজেন। এই পোস্টটা তাদের জন্য।

📌 ৬ মাস থেকে ১.৫ বছরের বাচ্চাদের প্রবণতা হলো যা পাবে তাই খাবে। তাই মুখে দিলে নষ্ট হয়না এমন বই, সেটা হলো ক্লথ বুক। The Humpty Dumpty Shop, Future Ummah BD তে এমন অনেক রকম ক্লথ বুক, কোয়াইট বুক পাবেন।

📌 ১.৫ থেকে ২.৫/৩ বছরের বাচ্চাদের প্রবণতা হলো বই ছিড়ে ফেলা, তাই এদের জন্য বেস্ট চয়েজ হলো ছিড়তে পারবে কম এমন টেকসই বই, সেটা হলো বোর্ড বুক। বাবুদের কয়েকটা বোর্ড বইয়ের নাম বলছি—

▪️আমার প্রথম পাঠাগার: ATFAAL
▪️এটা কী সিরিজ: Shoroborno Prokashon
▪️প্রতিদিনের আদব: Future Ummah BD Group

📌 অক্ষর শিখছে যারা, তাদের জন্য সুন্দর একটা হাতের লেখার খাতা- Magic Handwriting Book (বাংলা, ইংরেজি, আরবি, অংক সব আছে এক বইতে, সাথে আছে ম্যাজিক পেন ও লিড। এটাও পাবেন Humpty Dumpty Shop এ)
অক্ষরজ্ঞান শেখার জন্য আদর্শ লিপির পরিবর্তে আছে Atfaal এর- হেসে খেলে বাংলা শিখি- ১,২,৩।
আবু তাহের মিসবাহ হুজুরের বাংলায় বিসমিল্লাহ, কায়দায় বিসমিল্লাহ, নাজেরায় বিসমিল্লাহ বইগুলোও সুন্দর।

📌 যে বাবুরা নতুন পড়তে শিখছে তাদের জন্য উপযুক্ত হলো বইজুড়ে ছবি সাথে এক দুই লাইন লেখা এমন গল্পের বই। এমন একটি ইসলামী সিরিজ-
▪️ছোট্ট ছোট্ট গপপো সিরিজ (@Shoroborno prokashon)।
সাধারণ কয়েকটি ছোট্ট গল্প সিরিজও আছে, পাবেন Niyyat-নিয়্যাত, ToonToon Shop – টুনটুন পেইজে।

📌 ৪/৫ বা তার বেশি বয়সের বাচ্চা, যারা নিজেরা পড়তে পারে বা পড়ে শোনালে ভালো বোঝে, তাদের জন্য ATFAAL, আযান প্রকাশনী, সত্যায়ন প্রকাশন, Shoroborno Prokashon এ অনেক অনেক একক ও সিরিজ বই আছে—

▪️নবীদের গল্প সিরিজ- গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স
▪️ছোটদের প্রিয় রাসূল- সত্যায়ন
▪️ছোটদের খুলাফায়ে রাশেদা- সন্দীপন প্রকাশন
▪️ছোটদের সাহাবী সিরিজ- নবপ্রকাশ নবপ্রকাশ
▪️ছোটদের দরবেশ সিরিজ- নবপ্রকাশ

▪️ছোটদের তাওহীদ সিরিজ- মিফতাহ প্রকাশনী

▪️ছোটদের ঈমান সিরিজ- সত্যায়ন, সন্দীপন

▪️আদব: ছোটদের আদব সিরিজ- সত্যায়ন, Shoroborno গল্পে আনন্দে আদব শিখি- @Future Ummah BD

▪️আখলাক- ছোটদের আখলাক সিরিজ- সত্যায়ন, Shoroborno

▪️কুরআন তাফসীর: ছোটদের তাফসীর সিরিজ- Atfaal, শিশু-কিশোরদের আমপারা অনুবাদ- মুসলিম ভিলেজ ।

▪️হাদিস ও সুন্নাহ: বাচ্চাদের ৫০ টি বাছাইকৃত ছোট ছোট হাদিস অর্থসহ মুখস্থ করাতে চাইলে- ছোটোদের ৫০ হাদিস (Atfaal) , ৪০ টি হাদিসের ব্যাখ্যা জানতে- গল্পে গল্পে ৪০ হাদিস (আযান প্রকাশনী, মাকতাবাতুল আসলাফ -Maktabatul Aslaf ), গল্পে গল্পে সুন্নাহ শিখতে- সুন্নাহ শিখি উমারের সাথে Sanchalan Prokashoni – সঞ্চালন প্রকাশনী, একটি হাদিস একটি গল্প- নবপ্রকাশ।

▪️এক্টিভিটি বুক: এক্টিভিটির মাধ্যমে শেখা বাচ্চাদের জন্য খুবই আনন্দের, এ কারণে এক্টিভিটি বইগুলোও বাচ্চাদের পছন্দের প্রথম সারিতে। Future Ummah Bd অনেকগুলো সুন্দর সুন্দর এক্টিভিটি বই বের করেছে-

https://tinyurl.com/5ctsy9rn https://tinyurl.com/2d4hz79d

▪️আরও আছে- কুরআন-হাদীসের গল্প নিয়ে বোর্ড বই টুনটুন সিরিজ- ১,২,৩, একটি গল্প একটি আয়াত সিরিজ, এক দেশে ছিলো এক সিরিজ, আমি হতে চাই সিরিজ, গল্পে গল্পে বিজ্ঞান সিরিজ, মানতে হবে কী কী হাদিস থেকে শিখি, সূরা ফাতিহা: ৭ আয়াত ৭ গল্প, এসো জান্নাতের গল্প শুনি ইত্যাদি ইত্যাদি।

▪️স্কুলগামী বাচ্চাদেরকে জেনারেল শিক্ষার পাশাপাশি প্যাকেজ আকারে দ্বীনি জ্ঞান দিতে চাইলে ‘স্কুল মক্তব’ বই- একের মধ্যে সব। পাবেন Jazabor.com এ।

📌 বাচ্চাদের অনেকগুলো সিরিজ বইয়ের লিস্ট একসাথে- https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=128134410082562&id=100086580097908&mibextid=Nif5oz

√ বাবা-মায়েরা বাচ্চার জন্য বই বা খেলনা কেনার আগে অবশ্যই বয়স দেখে নেবেন, যে জিনিস যে বয়সের উপযোগী, তার আগে সেই জিনিস তেমন কাজে লাগেনা। ভবিষ্যতের জন্য কিনে রাখলে অন্য কথা।

√ প্রকাশনীদের প্রতিও একটা অনুরোধ, বাচ্চাদের বইতে অবশ্যই বাচ্চাদের বয়স রেইঞ্জ উল্লেখ করে দেবেন। ইদানিং অনেক বইতে বয়সের উল্লেখ দেখিনা।

√ আর লেখক ভাইবোনদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে, বাচ্চাদের বইয়ের ভাষা সাহিত্যিক মানে উত্তীর্ণ হওয়া দরকার নেই। একই শব্দের মধ্যে সবচে সহজ ও প্রচলিত শব্দটা, একই কথা সবচে সহজে বাচ্চার কাছে যেভাবে উপস্থাপন করা যায়, সেভাবেই লিখুন। তা নাহলে সমস্যা হয় আমাদের, ঐ কঠিন কঠিন শব্দ নিজেরা পড়ে ওদের কাছে আবার ট্রানস্লেট করা লাগে। তাই বাচ্চাদের বইয়ে পারতপক্ষে সবচে সহজ শব্দ, সহজ বাক্য ব্যবহার করা, আর রঙচঙ, চোখ মুখ ছাড়া প্রাণী এগুলো বেশ কাজে লাগে।

ইনকন্সিন্টেন্ট প্যারেন্টিং বনাম জুলুমের সহযোগীতা…..

লিখেছেন- নিশাত তামমিম

১. অভিভাবকেরা সন্তানের তারবিয়াতে দুইটা বড় ভুল করেন, তার প্রথমটা হলো- Inconsistent Parenting, সোজা বাংলায়, একজনের শাসনে আরেকজন বাগড়া দেয়া। তা কী রকম? ধরুন, মা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাচ্চার হাতে ডিভাইস দিবেনা, দিলেই বাচ্চার জন্য তা এডিকশানে রূপ নেয়। তখন পরিবারের অন্য আরেকজন অভিভাবক এসে ডিভাইস ধরিয়ে দিলো। এতে করে হবে কী, বাচ্চা বুঝে ফেলবে যে, এই পরিবারে শাসনের কন্সিস্টেন্সি নেই। কিংবা একজনের শাসন আরেকজনের কাছে গেলেই রহিত হয়ে যাবে, তাই চাইল্ড ব্রেইন খুব সুন্দর করে এই সুযোগটা নেবে। একটা সময় সে আর কারও কথাই শুনতে চাইবেনা। আর কারও কথাই যখন শুনবেনা, তখন সেই বিপদটা কিন্তু সবার ঘাড়ে এসে পড়বে। শাসনের এই ইনকন্সিস্টেন্সি মূলত শৈশবেই বেশি হয়ে থাকে।

২. ঠিক বিপরীতধর্মী আরেকটা পারিবারিক সমস্যা হচ্ছে, এক প্যারেন্টের জুলুমে আরেকজন তাল মেলানো। অর্থাৎ বাবা-মা দুইজন মিলে সন্তানের উপর জুলুম করা। আরেকটু খোলাসা করি। ধরুন, একটা পরিবারে বাবা খুব বদমেজাজী বা, মা খুব ইমোশনাল/সেন্সিটিভ। বাবা-মা মানেই তারা ভুলের ঊর্ধ্বে, এটা মনে করাও ভুল। ভুলে ভরা একেকটা মানুষ আমরা, নিজেরা ঠিক হতে না হতেই কিন্তু আমরাও বাবা-মা হয়ে যাই। তাহলে আমাদের সব আচরণ যে পার্ফেক্ট হচ্ছে, তাও কিন্তু না। নিজেদেরকে ভুলের ঊর্ধ্বে মনে করলে এটাও আরেক নতুন সমস্যার সৃষ্টি করবে। সন্তানের পাশাপাশি আমাদের নিজেদের সংশোধনের প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখতে হবে। তো বলছিলাম যে, বাবা যদি এমন বদমেজাজী হন যে, তিনি ভ্যালিড কোন কারণ ছাড়াই সন্তানের গায়ে হাত তোলেন বা রেগে গেলে যাচ্ছে তাই আচরণ করেন। কিংবা মা যদি এমন পর্যায়ের ইমোশনাল বা সেন্সিটিভ ব্যক্তিত্ব হন যে, সন্তানের বয়সানুপাতিক স্বাভাবিক একটা আচরণেও তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন, কিংবা সন্তানের বলা একটা ভ্যালিড কথাতেও তিনি প্রচণ্ড রাগ করে কথা বলাই বন্ধ করে দেন। এই বিষয়টাও অপর স্পাউজের বুঝতে হবে। একজন প্যারেন্ট যদি এমন একরোখা স্বভাবের হন, আরেকজন বুঝমান হন, তাহলে অপরজনের অবশ্যই উচিৎ হবে একরোখা প্যারেন্টকে উত্তম উপায়ে সন্তানের দিকটা বোঝানোর চেষ্টা করা। বাবা বিনা কারণে বকেছে, সন্তানের উপর আপনিও অন্য কোন কারণে রেগে আছেন, এই সুযোগে আপনিও বাবার পক্ষ নিয়ে বকতে শুরু করলেন। মা অকারণেই গাল ফুলিয়ে আছে, আপনিও গাল ফুলিয়ে রইলেন, সন্তান হয়তো বিনা অপরাধেই পরিবারে শ্বাস নেয়ার জায়গাটুকুও হারিয়ে ফেললো, তার দিক থেকেও কিছু বলার ছিলো যা শোনার কেউ থাকলো না। সন্তানের দিক থেকে এই অনুভূতিটাও কিন্তু দমবন্ধকর, যেখানে তার দুঃখ, কষ্ট, আবেগ, অনুভূতি শোনার বা বোঝার কেউ নেই, তার কষ্টে তার মাথায় রাখার মত কোন হাত নেই। আপনি নিজেই আপনার কৈশোর হাতড়ে দেখেন, এই পরিস্থিতি কতটা অসহায়ত্বের, একাকীত্বের! (পারবারিক এই একাকীত্বই কিন্তু অনেক সন্তানকে অবৈধ উপায়ে সঙ্গী খুজে নিতে বাধ্য করে, যার সাথে সে অন্তত মনের কষ্টটা শেয়ার করতে পারে)

আপনাকে বুঝতে হবে, সন্তানকে শাসন করা প্যারেন্টের উপর দায়িত্ব, কিন্তু জুলুম করা নয়। সন্তানের বয়স, ন্যাচার, পার্সোনালিটি, পরিস্থিতি কিছু না বুঝেই যদি আপনি শুধু আপনার কাছে যেটা ঠিক, সেটা ঠিক ভুল যাই হোক, তা মানতেই বাধ্য করেন, না মানলে তাদের উপর শক্তি প্রয়োগ করেন, তাহলে ধরে নিন, এই শাসনের স্থায়িত্ব সাময়িক। তারা শক্তিমান হওয়ামাত্রই আপনাদের দুজনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে, আপনাদের কাছে খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু করে বসবে ক্ষেপে গিয়ে। অথবা খুব শান্ত মেজাজের বাচ্চাও যদি হয়, অন্যায় শাসন মেনেও নেয়, তারপরেও আপনাদের বিরুদ্ধে মনের ভিতরে প্রচণ্ড একটা ঘৃণা বা কষ্ট নিয়েই বড় হবে, ঐ কষ্ট তাকে আজীবন তাড়িয়ে বেড়াবে, বাইরে বাইরে ভক্তি দেখালেও মন থেকে কখনোই শ্রদ্ধা করবে না। এই ধরণের জুলুমি শাসনের পরিবারের সন্তানেরাই বেশিরভাগ জীবনের একটা পর্যায়ে গিয়ে মারাত্মক ডিপ্রেশানে ভোগে, কেউ অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে যায়, কেউ মাদকাসক্ত হয়ে যায়, এমনকি সুইসাইডও করে বসতে পারে।

এই দুই গলতের প্রথমটা বেশি হয় শিশুর শৈশবে, যখন তার জন্য আদরের পাশাপাশি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শাসনটাও দরকার। আর দ্বিতীয়টা বেশি হয় শিশুর বুঝের বয়সে বা কৈশোরে, যখন তার ভুল ঠিকের কিছু ধারণা হয়ে যায়, এমনকি এই জুলুমি আচরণ অনেক প্যারেন্ট বাচ্চারা বড় হয়ে গেলেও করতে থাকেন, যার নেতিবাচক ফল সন্তানের স্পাউজের উপর গিয়েও পড়ে। একটা বয়সে বাচ্চার জন্য যেমন নিয়মতান্ত্রিক শাসনের প্রয়োজন, আবার একটা বয়সে বাচ্চার দিকটা বোঝা, তার মনের আবেগ, দুঃখ, কষ্ট এই অনুভূতিগুলোও অন্তত একজনের বোঝা দরকার। সেও তো একটা মানুষ, মেশিন নয় যে যন্ত্রের মত শুধু মনিবের হুকুম তামিল করবে। একটা বিষয়ে তার দিক থেকেও কোন লজিক্যাল রিজনিং থাকতে পারে, সেটা না জেনে না বুঝে দুইজন মিলে সমান তালে শুধু শাসন করতে থাকলে এই শাসন আসলে বাচ্চাকে সংশোধন করার বদলে বিদ্রোহী বা হতাশ করেই তুলবে কেবল।

সমাধান কী? অনেক কথা বলা যাবে বলতে গেলে। তবে সহজ ফর্মূলা হলো- Connect before you Correct. সন্তানকে সংশোধনের জন্য তার সাথে আগে আপনার সম্পর্ক বিল্ডাপ করুন। এমনও অজস্র পরিবার আছে, যেখানে সন্তানেরা নিজেরাও বাবা-মা হয়ে গেছে, এত বছরেও ঐ সন্তানের তার বাবা-মায়ের সাথে কানেকশান তৈরি হয়নি, সে এত বছরেও অনুভব করেনি, তার বাবা-মা তাকে আদৌ বোঝে বা অন্তত বুঝতে চেষ্টা করে। সন্তানকে শাসনের জন্য সন্তানের সাথে এই বোঝাপড়ার সম্পর্কটা গড়ে তোলা জরুরি। অবুঝ বয়সে কিছু বিষয় চাপিয়ে দিতে হলেও সন্তানের বুঝের বয়সে প্রত্যেকটা বিষয় তার সাথে খোলাখুলি আলাপ করুন, তার মতামতটা শুনুন, আপনার মতামতটা বলুন, আপনার মতটা কেন গুরুত্বপূর্ণ তা কুরআন হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে হলেও বুঝাতে থাকুন, একটা সময় সে ঠিকই বুঝবে ইনশাআল্লাহ। কিছু ক্ষেত্রে শাসনের প্রয়োগও করতে হবে অবস্থা বুঝে। কিন্তু শুধুই একমুখী শাসন নয়, বোঝাপড়া ও পারস্পরিক মতবিনিময়ের সম্পর্ক স্থাপনটাও জরুরি, যা অনেক অনেক পরিবারে আমৃত্যুও স্থাপিত হয়না। ফলে একটা বয়স পার হয় একপক্ষের শাসন আরেকপক্ষের বিদ্রোহে, আরেকটা বয়স পার হয় উভয়পক্ষের দোষারোপ আর অভিযোগের মধ্য দিয়েই। এই সমস্ত সমস্যার গোড়ার কারণটা ছিলো-

They lacked the true Connection in their family, they only tried to Correct althrough the life…..

নারী কি কেবলই আবেগী সত্ত্বা??

লেখক- নিশাত তামমিম

অবিবাহিত লেখক বা পাঠক ভাইদের মধ্যে আমি কমন একটা চিন্তা খেয়াল করি, তারা কেন যেন নারীকে এমন একটা সত্তা মনে করেন, যেই সত্তাটা স্রেফ আবেগতাড়িত, সেখানে লজিকের কোন স্থান নেই। আর এই কারণে শুধু আবেগ সংক্রান্ত সমাধানকেই তারা পারিবারিক সকল সুখের রূপকার মনে করে থাকেন। পারিবারিক সুখের রূপকল্পে তাই তাদের কিছু কমন প্রেস্ক্রিপশান হলো- স্ত্রীকে ১০০ বার বলুন ‘ভালোবাসি’, স্ত্রীর জন্য বাইরে থেকে ফুল কিনে নিয়ে যান, স্ত্রীর সাথে বাসায় বসে মনের সুখে গল্প করুন, তার শাড়ির রঙ, চুলের খোপা, লিপস্টিকের ব্র‍্যান্ড নিয়ে আলোচনা করুন…..

আমি বলছিনা, এই উপদেশগুলো ভুল। এগুলো অবশ্যই একটা দাম্পত্য সম্পর্কে ফ্লেভার এড করে, বিয়ের প্রথমদিকে সম্পর্ক বিল্ডাপ করার জন্য এগুলো সাহায্যও করে। তবে মোটাদাগে একটা কথা বলি- এইসব লুতুপুতু কারণে হয়তো অনেকসময় সম্পর্কের মাধুর্য নষ্ট হতে পারে, তবে অন্তত সংসার ভাঙেনা। এসব ছোটোখাটো জিনিসের অভাবে আমি অন্তত তেমন কাউকে স্পাউজ নিয়ে অভিযোগ করতে দেখিনি, এক্সট্রিম দুঃখবিলাসী বা দুনিয়াপ্রেমী মানুষ ছাড়া।

তাই বিয়ের প্রস্তুতি হিসেবে ভাইদের ‘রোমান্টিক’ হওয়ার প্রচেষ্টা এতটা দরকার নেই, যতটা দরকার দায়িত্বশীল হওয়া, বুঝদার হওয়া, পারিবারিক জটিলতায় কৌশলী হওয়া, আখলাক্বওয়ালা হওয়া, আর দ্বীনের ক্ষেত্রে সত্যিকারেই দ্বীন মেনে চলার চেষ্টা করা। দেখুন, একটা দ্বীন না বোঝা মেয়েকে আপনি ফোনে ‘আই লাভিউ’ বলে, দু একটা রোম্যান্টিক ডায়ালগ দিয়ে পটায়ে ফেলতে পারবেন। বিপরীতে একজন দ্বীনদার মেয়েকে পটানোর সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো- কঠিনভাবে দ্বীন মেনে চলা, আর দায়িত্বশীলতা। লাভিউ বললে স্ত্রী খুশি হতে পারে, তবে আগের পয়েন্টগুলোতে নেগেটিভ হলে এই শব্দটাই তার কাছে ফেইক মনে হবে।

ভাইয়েরা আরেকটা কমন ডায়ালগ দেয়- ‘মেয়েরা বোঝার জন্য আসেনি, ভালোবাসার জন্য এসেছে।’ আমি জানি তাদের উদ্দেশ্য ভালো। তবে কথাটা পূর্ণ সত্য নয়। মেয়েরা ভালোবাসে, তবে তার জন্য অবুঝ হতে হয়না, অবুঝ প্রেম তো আসলে ‘হারাম প্রেম’কেই বোঝায়, যেখানে কোন যুক্তি লাগেমা। বিপরীতে যে ইসলাম মেনে চলে, সে কাউকে ভালোবাসতে হলেও সেই ভালোবাসাটা দ্বীনের মাপকাঠিতে শুদ্ধ হবে কিনা, তা জেনেবুঝেই ভালোবাসে। জ্বী, আমি আমার সন্তানকে যতটা ভালোবাসি, সন্তানদের বাবা ততটা পারবেনা, তবে আমি জেনেবুঝেই ভালোবাসি, না বুঝে না। যেখানে আদর দরকার সেখানে আদর করি, যেখানে শাসন দরকার, সেখানে শাসন। যে মা শাসন বোঝেনা, শুধু আদরই বোঝে, তার সন্তানেরা তো অবাধ্য ও বখাটে হবে। স্বামী হারাম উপার্জন করছে, ফরজ নামাযের জামাতে শামিল হচ্ছেনা, যাকাত দিচ্ছেনা, তাও ভালোবাসবে? স্বামীকে উত্তম উপায়ে সে বুঝাবে না? সে বুঝমান না হলে তার স্বামী সন্তানকে নিয়ে জান্নাতে যাবে কি করে? একজন বদদ্বীন নারীকে শয়তান যতটা বন্ধু মনে করে, একজন সত্যিকার দ্বীনদার নারীকে শয়তান ততটাই ভয় পায়, কারণ দ্বীনি নারীর হাতেই সংসারে দ্বীনের ভিত রচিত হয়। সেই নারী কিছুই বোঝেনা, খালি ভালোবাসা বোঝে, এত সিলি উপমা দিয়ে কি আদতে তার গুণকীর্তন করা হয়? না বদনাম করা হয়?

যাহোক, আগের কথায় আসি। নিজের সাড়ে ৬ বছরের বিবাহিত জীবন আর ১০/১২ বছরের টুকটাক পারিবারিক কাউন্সেলিংয়ের অভিজ্ঞতা থেকে আমি যে কারণগুলোকে পারিবারিক অশান্তি বা ভাঙনের উৎস হিসেবে দেখেছি, সেগুলো বলছি, তাহলে ধারণা পাবেন—

১. আপু, আমি পূর্ণ লেবাসী দ্বীনদার দেখে বিয়ে করেছিলাম, বিয়ের পর দেখি তার দ্বীন শুধু লিবাসেই, জীবনে নাই। আখলাকেও মারাত্মক সমস্যা। এখন আমার দ্বীনি ছেলেদেরকেই অবিশ্বাস হয়।

২. আপু, আমার হাজব্যান্ডের নজরের হেফাজত নেই। বাইরে যদিও দৃষ্টি নত করেই চলার চেষ্টা করে, কিন্তু ঘরের ভেতরের গাইরে মাহরামদের সাথে চোখের পর্দা রক্ষায় সচেষ্ট না। আমি বলতে গেলেও রাগ হয়।

৩. আপু, আমি পরিবারের সবার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে শুধু দ্বীন দেখে বিয়ে করেছিলাম, দ্বীনের জন্য পড়াশোনা, জবও ছেড়েছি। কিন্তু বিয়ের পর দেখি, স্বামী আয় রোজগারের ব্যাপারে সচেষ্ট না। বার বার বললেও রাগ হয়। এখন আমাকে একটা অনলাইন পেইজ দিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে। বাবা-মাকেও বলতে পারিনা, যেহেতু তারা রাজিই ছিলোনা এই বিয়েতে।

৪. আপু, আমি যৌথ পরিবারে থাকি। আমি আমার স্বামীকে তার বাবা-মায়ের হক্ব পালনে কোনদিন বাধা দিইনি। অথচ আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমার ছোট ছোট বিষয়ও তার কাছে বড় করে তুলে ধরে, আর সে বাবা-মাকে কিছু বলতে না পেরে আমার উপরেই রাগ ঝাড়ে। আমার কষ্টটা যদি সে-ও না বোঝে, তাহলে আমি এই সংসারে কার জন্য কষ্ট করবো?

৫. আপু, আমি এক/দুইটা বাচ্চা নিয়ে ঘর সামলাতে গিয়ে এতটা স্ট্রেসের মধ্যে আছি যে, দিনে রাতে ২ টা ঘণ্টা একটানা ঘুমাতেও পারিনা৷ বাচ্চার বাবা আমাকে একটুও হেল্প করেনা, নিজের কাজ নিয়েই পড়ে থাকে, আমি কিছু বলতে গেলেও সে তার মা বা অন্য কারও সাথে কম্পেয়ার করে আমাকে ছোট করে। আমার কষ্টের কোন মূল্য কি তার কাছে নেই? মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি না থাকলেই হয়তো সব সমাধান হয়ে যেতো।

৬. আপু, ও শুধু শারিরীক প্রয়োজনটাই দেখে। অথচ আমার মনের চাহিদা সম্পর্কে ওর কোন আগ্রহ নেই। যাকে ভালোই বাসতে পারিনি, তার জন্য আগ্রহ আসবে কি করে?

৭. আপু, আমার স্বামী বাবার বাসায় জীবনে কোন কাজের দায়িত্ব নেয়নি, এক গ্লাস পানি কোনদিন ঢেলে খেতে দেয়নি তার মা। এখন আমার শত কষ্টেও সে নিজের দায়িত্বগুলো পালন করতে পারেনা, আমাকে সামান্য হেল্প করলেও তার বাবা-মা অসন্তুষ্ট হয়। আমি মেয়ে হয়েও পরিবারে মেয়ে ও ছেলে দুই ধরনের দায়িত্বই আমাকে পালন করতে হয়।

৮. আপু, আমার হাজব্যান্ড দ্বীনে ফিরে এসেছে ঠিকই, কিন্তু এখনও সুযোগ পেলেই গেমস খেলে, সিনেমা দেখে, অদ্বীনি বন্ধুদের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফালতু আড্ডা দেয় (এমনকি অনেকে পর্ণসাইটেও ভিজিট করে)। মাঝে মাঝে খুব আফসোস লাগে, কী দেখে বিয়ে করেছিলাম!

৯. সে আমাকে দ্বীন দেখে বিয়ে করেছে, অথচ এখন সে দুনিয়াবি মানুষের সাথে আমার তুলনা দেয়!

১০. আমার হাজব্যান্ড পারিবারিক বড় কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেও আমার সাথে পরামর্শ করেনা, কিছু জিজ্ঞেস করলেও এড়িয়ে যায়। সিদ্ধান্তের ফলাফল যখন শেষমেষ খারাপ হয়, তখন আফসোস করে। অথচ রাসূল সা. ও প্রয়োজনের মুহুর্তে স্ত্রীদের পরামর্শ নিতেন।

হ্যা, দাম্পত্য সম্পর্কে রোমান্স, খুনসুটি প্রয়োজন নেই, তা না। নিতান্তই কাঠখোট্টা হাজব্যান্ড, যে কিনা হাতে একটা টিভির রিমোট বা মোবাইল নিয়েই পড়ে থাকে, বাইরে গেলে অফিস, ঘরে ফিরলে মোবাইল- এই দুই নিয়েই যার জগৎ…. এমন মানুষকে অবশ্যই স্পাউজ হিসেবে কেউ পছন্দ করেনা। তবে স্বামী-স্ত্রীর আলোচনার বিষয়বস্তু কী হবে, সেটা জেন্ডার বেইসড এর চেয়ে পার্সোনালিটি বেইজড বেশি হয়। শাড়ি চুড়িই যার জগৎ, সে সেটা নিয়েই কথা বলবে, এতে দোষের কিছু নেই৷ আবার যার জগৎ অন্যটা, সে তা নিয়েই কথা বলবে। লজিক্যাল মানুষ লজিক্যাল কথা শুনতে পছন্দ করে, ইমোশনাল মানুষ ইমোশনাল কথা। ইমোশনাল এর পার্সেন্টেজ মেয়েদের মধ্যে বেশি তবে একচেটিয়া সবাই ইমোশনাল না। মেয়েদের মধ্যেও বড় একটা অংশ লজিক্যাল/র‍্যাশনাল, ছেলেদের মধ্যেও বড় একটা অংশ ইমোশনাল। পুরুষ মানেই তার ইমোশান নেই, নারী মানেই তার লজিক সেন্স নেই, কথাটা এক তরফা সত্য না। অনেক পুরুষের ইমোশান নারীর চেয়েও বেশি, অনেক নারীর লজিক সেন্স পুরুষের চেয়েও বেশি। ছবিতে আমরা ৩ ধরনের ব্রেইন দেখতে পাচ্ছি— লজিক্যাল, র‍্যাশনাল, ওয়াইজ। এই ৩ টাইপ চিন্তা প্রত্যেকের মধ্যেই থাকে, তবে প্রত্যেকের মধ্যে একটা বৈশিষ্ট্য ডমিন্যান্ট হয়, সেটাকেই তার পার্সোনালিটি ধরা হয়। নারীদের মধ্যে কিছু বিশেষ সময়ে হর্মোনাল কারণে ইমোশনাল চিন্তার আধিক্য দেখা দেয়, যেমন- প্রেগ্ন্যান্সির সময়, পোস্ট পার্টাম স্টেইজে, মেনোপজের পরে। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় পার্সোনালিটির এই ট্রেইটগুলোকে একচেটিয়া লিঙ্গায়িত করা যায়না, লিঙ্গভেদে রেশিও কম বেশি হতে পারে, এটুকুই। যেমন- সাহসিকতাকে একটা পুরুষালি বৈশিষ্ট্য হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু নারীর মধ্যে কি সাহস নেই? তাহলে আসমা বিনতে আবু বকর, তুমাদির আল খানসা, আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুন্না) উনাদের সাহসিকতার গল্প আমরা ইতিহাসে কেন পাই? সাহাবিয়াদের জীবনে বরং আমরা শাড়িচুড়ির গল্প পাইনা বললেই চলে……

যাহোক, সবশেষে একটা কথা বলে যাই, উস্তায তানযীল আরেফিনের ‘বিয়ে’ বইটা আমার পড়া অন্যতম ভালো একটা প্র‍্যাক্টিক্যাল উপদেশ সমৃদ্ধ বই। যদিও এই বইটিই লেখক ও পাঠকসমাজে সবচে বেশি বিতর্কিত হয়েছে। বিবাহিত জীবনের বাস্তবতা জানতে হলে অন্তত ৫ বছরের বিবাহিত ভাইবোনদের পরামর্শ নিন। সন্তান লালন পালনের বাস্তবতা জানতে হলে অন্তত এক-দুই বাচ্চার মা-বাবার কাছে শুনুন। নিতান্তই প্র‍্যাক্টিক্যাল বিষয়ে প্র‍্যাক্টিক্যাল অভিজ্ঞতা ছাড়া শুধু থিওরি বাস্তবতাবিবর্জিত ফ্যান্টাসিই আনে কেবল!

দ্বীন পালনে হীনমন্যতা!

লিখেছেন- নিশাত তামমিম

নতুন দ্বীনে ফেরার পর অথবা পারিবারিক ট্রাডিশিন হিসেবে ধর্মকর্ম করা মানুষজন দ্বীনের পথে চলা নিয়ে অনেকসময় হীনমন্যতায় বা মনোকষ্টে ভোগেন-

ওরা বিয়ের অনুষ্ঠানে কত সুন্দর করে সাজছে, আমি পারছিনা!

ওরা অফিসে কত ওয়েল গেটাপ ড্রেসাপে আসছে, আমাকে ক্ষ্যাত হয়ে আসতে হচ্ছে! সবাই আমাকে না জানি কত ছোট মনে করছে!

ওরা জন্মদিন কত সুন্দর করে সেলিব্রেট করছে, আমার বাচ্চারা কিছুই পারছেনা! ওদের কত মন ছোট হচ্ছে!

ওরা কত সুন্দর গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড নিয়ে রোম্যান্টিক সময় পার করছে, আমাদের জীবন নিরস, কোন মজা নাই!

……………………………………………….

এই যে এই চিন্তাগুলো হলো আমাদের হীনমন্যতা, আমাদের চিন্তার দৈন্যতা। আদর্শ বা হক্ব নিজেই একটা স্ট্যান্ডার্ড, এটাকে গ্লোরিফাই করার জন্য আর কোন গ্লোরিফাইয়ার দরকার নাই। আদর্শ তার নিজের আদর্শেই সম্মানিত। হক্ব তার নিজের সৌন্দর্যেই সুন্দর। একে সুন্দর করার জন্য আলাদা কোন আটা ময়দা মাখার প্রয়োজন হয়না।

তেমনি একজন মুসলিমের সম্মান কীসে? ইসলামে। ইসলামই আমাদের সর্বোচ্চ সম্মানে অধিষ্ঠিত করেছে। সেই ইসলাম নিয়েই তো আমাদের প্রাউড থাকার কথা! হক্বের পথে চললে বাতিলের খারাপ লাগবেই, তাতে বাতিলের ভয়, হক্বের তো হীনমন্যতার কিছু নেই! হক্ব যে হক্ব, এটাই তার গর্ব, এটাই তার সম্মান; সারা পৃথিবী বিপরীত পথে চললেও হক্বের অনুসারীদের লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই, এই স্রোতের বিপরীতটাই তার জন্য গর্বের, তার জন্য সম্মানের। আল্লাহ ইসলামের মাধ্যমেই মুসলিম জাতিকে সম্মান দিয়েছেন, সেখানে আমরা ইসলামটাকে ধামাচাপা দিয়ে বাতিলের সাথে সুর মিলিয়ে ফেইকভাবে বড় হতে চাই। তাতে আমাদের সম্মান আসলে বাড়ে, না কমে??

এই আত্মবিশ্বাসের জায়গাটাতেই আমাদের ঘাটতি। আমরা সন্তানদের কাছে আদর্শের এই স্ট্যান্ডার্ডটাই ফিক্স করতে পারিনা, তাই ইসলামটাকে আজীবন তারা নিজের ঘাড়ের উপর চাপানো এক বোঝা মনে করে কষ্ট করে বয়ে নিতে থাকে। সামান্য বৈরি হাওয়া পেলেও ইসলামের খোলসটা খুলে যায়, কিংবা একটু আড়ালে আবডালে গেলেই ইসলামটাকে এরা খুলে ফেলে স্বাধীনতা অনুভব করে। অথচ প্রকৃত সম্মান ইসলামে, প্রকৃত স্বাধীনতা ইসলামে, এটাই তাদের জেহেনে ঢুকিয়ে দিতে পারিনা।

ইসলাম মানে পরাধীনতা নয়, ইসলামই স্বাধীনতা। এক আল্লাহর গোলাম যে হয়ে যায়, দুনিয়ার কোন পরাশক্তি, অপশক্তির সামনে সে মাথা নত করেনা৷ তাকে জেলখানায় আবদ্ধ করলেও সে সেটাকে ইবাদাতের জায়গা মনে করে। ইবনে তায়মিয়্যার উক্তিটা আছেনা? যে অন্তরে স্বাধীন, তাকে দুনিয়ার কোন শক্তি আটকে রাখতে পারে??

বিপরীতে যে আল্লাহর গোলাম হতে পারেনা, সে বাকি জীবন শয়তানের আর নফসের গোলামি করেই কাটিয়ে দেয়। কখনো অফিসের বসের গোলাম, কখনো সৌন্দর্যের গোলাম, কখনো টাকার গোলাম, কখনো ক্ষমতার গোলাম, কখনো ডিগ্রির গোলাম, কখনো প্রবৃত্তির গোলাম, কখনো সমাজের গোলাম…. তার পুরো জীবনটাই গোলামি করে কেটে যায়। এক স্রষ্টার গোলামী তাকে সমস্ত সৃষ্টির গোলামী থেকে মুক্তি দেয়। অথচ বোকা মানুষ বাক্সবন্দী চিন্তার কারণে এই স্বাধীনতাকেই পরাধীনতা মনে করে আজীবন ‘পরাধীনতা’ ও ‘গোলামির’ জীবন বয়ে নিয়ে চলে।

এ কারণেই আমাদের বাচ্চারা এক পর্যায়ে গিয়ে অন্যদের হারামে নিমজ্জিত দেখে নিজে করতে না পেরে কষ্ট পায়! সারকাস্টিক! অথচ একজন মুসলমানের সন্তানের তো কাউকে হারামে নিমজ্জিত দেখে রাগান্বিত হওয়ার কথা, অবাক হওয়ার কথা- কেন অন্যরা হারামে নিমজ্জিত হচ্ছে? তার অন্তরে তো দা’ঈর ব্যথা জাগ্রত হওয়ার কথা- কিভাবে তাদের বুঝিয়ে দ্বীনের পথে আনা যায়!

অথচ হচ্ছে কী? আজকে আমাদের দৈন্যদশা থেকে সন্তানের মধ্যেও তা ট্রান্সফার হুচ্ছে, তখন তাদের দৈন্যদশায় মনোকষ্ট দূর করার জন্য আমাদেরকে হারামের একটা সাবস্টিটিউট দিয়ে তাদের স্যাটিসফাই করতে হচ্ছে-

ওরা জন্মদিন পালন করছে? আচ্ছা, আমরা কেক না কেটে বিরিয়ানি খেয়ে নিজেরা সেলিব্রেট করি!

ওরা বাইরে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরছে? আমরা বাইরে বোরখা পরে ঘরে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে শখ মিটাই!

ওরা ক্রিসমাস ডে পালন করছে? আমরাও আমাদের মসজিদে বাচ্চাদের নিয়ে একটা ইসলামী আনন্দোৎসব করি!

ওরা শাড়ি পরে বেপর্দা হয়ে সাজছে! আমরা হিজাব পরে তার উপর সাজি, ফুলস্লীভ ড্রেস পরে তার সাথে সাজি!

ওরা অফিসে শাড়ি পরে আসছে? আমি বোরখা ছেড়ে শাড়ির উপর হিজাব দিয়ে আসি!

ওরা দাড়ি শেভ করছে? আমি দাড়িটা ট্রিম করে পাতলা বানিয়ে স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করি!

ওরা সাদা শাড়ি লাল পাড় পরে বৈশাখ পালন করছে? আমি সাদা বোরখা, লাল হিজাব পরে বৈশাখ পালন করি!

ওরা হ্যালোউইন করছে, আমিও করি! ওরা হোলি খেলছে, আমিও খেলি! ওরা বড়দিন পালন করছে, শারদীয় উৎসব করছে, আমিও সাথে থাকি!

আহারে গোলামি! আহারে পরাজিত মানসিকতা! ইসলাম নিয়ে যাদের গর্বিত হওয়ার কথা ছিলো, তারাই আজ ইসলামটাকে আড়ালে লুকিয়ে রেখে শয়তানি সভ্যতার অনুকরণ করে বড় হতে চায়। এরা কি আদৌ বড় হতে পারে? কোকিল হয়ে কাকের বেশ ধরা কি ইজ্জতির না যিল্লতির?

উমার রা. এর একটা উক্তি আমার এত ভালো লাগে, মনে হয় মৃত্যুর সময়ও যেন এই কথার ইজ্জতি নিয়েই মরতে পারি (আল্লাহ কবুল করুন)। যে ইসলাম আমাদের সম্মান দিয়েছে, তা ছেড়ে আজ আমরা কোথায় সম্মান খুজছি?

সেই উমার! বারো তালি দেয়া পোশাক পরেও যিনি অর্ধ পৃথিবী শাসন করেছেন! রাদিয়াল্লাহু আনহু। সেই মুহাম্মাদ! গোটা পৃথিবীর মহামানবদের তালিকায় যাকে এক নাম্বার স্থান দিতে বাধ্য হয়েছে অমুসলিমরাও, যার ঘরের আয়তন ছিলো এমন, উনি দাড়ালে ছাদে মাথা ঠেকতো, উনি শুলে দেয়ালে পা ঠেকে যেতো! সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ❤️

এই উম্মতের সম্মান কোথায়? ইজ্জত কোথায়? সম্পদে? দামী পোশাকে? বাড়ি গাড়িতে? বড় ডিগ্রিতে? জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎকর্ষে?

উহু, দ্বীনদারিতায়! তাক্বওয়ায়!

এইটুকু মন থেকে বুঝতে পারলে আর বাকী জীবন দ্বীন নিয়ে লজ্জিত হতে হবেনা, মাথা উচু করে চলতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ।

বেশি না, মাত্র কয়েকটা উক্তি মনে রাখেন, বাচ্চাদেরও শোনান। সারাজীবন কাজে দেবে-

১. “আমরা তো লাঞ্চিত জাতি ছিলাম। আল্লাহ ইসলামের দ্বারা আমাদের সম্মানিত করেছেন। আজ সেই ইসলাম ছেড়ে অন্য কিছুতে সম্মান খুজতে গেলে আল্লাহ আবারও আমাদের লাঞ্চিত করে দেবেন।”
~ উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

২. “শত্রুরা আমার কীইবা করতে পারবে? আমার জান্নাত তো আমার অন্তরে। আমি যেখানেই যাই তা আমার সাথেই থাকে, আমার থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হয়না। যদি তোমাকে আমাকে কারাগারে নিক্ষেপ করো, তা আমার ইবাদতের জন্য নির্জন আশ্রয়স্থল। যদি তোমরা আমাকে মৃত্যুদন্ড দাও, তা আমার জন্য শাহাদাতের সুযোগ। তোমরা আমাকে দেশ থেকে নির্বাসন দাও, তা আমার জন্য এক আধ্যাত্মিক ভ্রমণ।”
~ ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহিমাহুল্লাহ)

৩. “মুমিন ব্যক্তি হচ্ছে বৃক্ষের মত, দমকা হাওয়ার সাথে সর্বদা যুদ্ধে লিপ্ত। এই দমকা হাওয়া তোমাকে সমূলে উচ্ছেদ করে ফেলতে চাইবে। কিন্তু যখন সে বুঝতে পারবে যে তোমাকে এভাবে মাটি থেকে সরাসরি তুলে ফেলা সম্ভব নয়, তখন সে আরো সূক্ষ্ম পন্থা অবলম্বন করবে। তখন সেই বাতাস মৃদুভাবে বইবে যাতে করে তোমার একটা পাতা ঝরাতে পারে, তারপর আরেকটা, তারপর আরেকটা- যতক্ষণ না তুমি পাতাহীন বৃক্ষে পরিনত হও। তবে এই ফাদে পা দেবেনা, বাতাসের মুখে একটা পাতাকেও ঝরতে দেবেনা। যেভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুনাফিক্বকে বাতাসের সাথে নুয়ে পড়া গাছের তুলনা দিয়েছেন, তেমনিভাবে মু’মিনকে খেজুর গাছের সাথে তুলনা করেছেন, কারণ খেজুর গাছের পাতা কখনো ঝরেনা। সম্পূর্ণ গাছটি হচ্ছে দ্বীন, তোমার অন্তরে আল্লাহর জন্য ভালোবাসার বীজ থেকেই এই গাছটি অংকুরিত হবে। এরপর এই গাছ থেকে আমরা লাভ করবো প্রথম ফল ‘আল ওয়ালা ওয়াল বারা’। আর যখন তোমার শাখা-প্রশাখা আকাশ ছোঁবে, তখন কেউ তোমার পাতা পর্যন্ত পৌছুতেই পারবেনা। তারা তোমাকে বন্দী করতে পারে, তোমাকে হত্যা করতে পারে, কিন্তু তারা কখনো একথা বলতে পারবেনা যে তারা তোমার পাতা ঝরাতে পেরেছিল। “
~ তারেক মেহান্না

কবীরা গুনাহের লিস্ট

লেখক- নিশাত তামমিম

কবিরা গুনাহ বা বড় গুনাহ হলো- যে সব আদেশ–নিষেধের লঙ্ঘনে জাহান্নাম, আগুনের শাস্তি বা নির্দিষ্ট আযাবের সাবধানবাণী রয়েছে। এসব কাজ হারাম; এই গুনাহ খালেস দিলে তাওবা ছাড়া মাফ হয়না।

🔻 তাওবার ৬ টি শর্ত রয়েছে, এর একটিও পূরণ না হলে তাওবা কবুল হবে না—

▪️১. তাওবা একমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে এবং আল্লাহর কাছেই করতে হবে;

▪️২. কৃত গুনাহর জন্য আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে;

▪️৩. যে গুনাহ হতে তাওবা করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে;

▪️৪. ভবিষ্যতে এই গুনাহ আর না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে;

▪️৫. নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাওবাহ্ করতে হবে, তা হলো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত;

▪️৬. গুনাহটি যদি মানুষের হক্ব সংশ্লিষ্ট হয়, তবে সেই হক্ব তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে, অথবা ক্ষমা চেয়ে মিটমাট করে নিতে হবে।

তাহলে এবার আমরা লিস্ট ধরে একটা একটা করে মিলিয়ে দেখি, কার কোথায় সমস্যা আছে। সেই গুনাহ বাদ দেয়ার চেষ্টা করি, কৃত গুনাহের জন্য খাটি দিলে তাওবা-ইস্তেগফার করি।

🔥 কাবীরা গুনাহের তালিকা 🔥

কাবীরা গুনাহের কোন সুনির্দিষ্ট তালিকা কুরআন ও হাদীসে একই জায়গায় ধারাবাহিকভাবে আসেনি। বিভিন্ন আয়াত ও হাদীস গবেষণা করে ‘আলিমগণ কাবীরা গুনাহের তালিকা প্রণয়ন করেছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছেন ইমাম হাফিয শামসুদ্দীন আয্ যাহাবী (রহিমাহুল্লাহ)। তিনি তার কিতাব ‘‘আল কাবায়ির’’-এর মধ্যে অর্ধশতাধিক কাবীরা গুনাহের তালিকা দিয়েছেন। সম্প্রতি সাউদী আরবের বিখ্যাত ‘আলিম শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম বিন ‘আবদুল্লাহ আত্ তুয়াইজিরী একটি তালিকা প্রণয়ন করেছেন যা তার রচিত ইসলামী ফিকহ বিশ্বকোষ-এর ১৬ তম পর্বে ‘‘কিতাবুল কাবায়ির’’ নামে উল্লিখিত হয়েছে। নিম্নে সেই তালিকাটি পেশ করা হলো।

🔴 অন্তরের কাবীরা গুনাহ :

১. কুফর

২. শির্ক

৩. অহংকার

৪. মুনাফিক্বী

৫. রিয়া বা লোক দেখানো ‘আমল

৬. যাদু করা

৭. অশুভ লক্ষণ বিশ্বাস করা

🔴 জ্ঞান ও জিহাদ সংক্রান্ত কাবীরা গুনাহ :

৮. আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশে জ্ঞান অর্জন করা

৯. জ্ঞান গোপন করা

১০. আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর উপর মিথ্যা আরোপ করা

১১. জ্ঞান অনুযায়ী ‘আমল না করা

১২. আল্লাহর পথে দা‘ওয়াত দানে বিরত থাকা বা দা‘ওয়াতী কাজ ছেড়ে দেয়া

১৩. সৎ কাজের আদেশ দান ও অসৎ কাজে নিষেধ করা হতে বিরত থাকা বা তা ছেড়ে দেয়া

১৪. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা হতে বিরত থাকা বা তা ছেড়ে দেয়া

১৫. ভ্রান্তদলের পক্ষে যুদ্ধ করা

১৬. যুদ্ধে মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব করা ও তাদেরকে সাহায্য করা

🔴 শাসন-প্রশাসন ও লেনদেনের ক্ষেত্রে কাবীরা গুনাহ:

২৫. আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান ছাড়া শাসন/বিচার করা

২৬. শাসক কর্তৃক নাগরিকদের ধোঁকাদান বা নাগরিকদের সাথে প্রতারণা করা

২৭. অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভক্ষণ করা

২৮. সূদ খাওয়া

২৯. ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ ও অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করা

৩০. জুয়া খেলা

৩১. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া

৩২. শরীয়তের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা

৩৩. স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রয় করে মূল্য গ্রহণ করা

৩৪. অন্যায়ভাবে মালিকানা দাবি করা

৩৫. মানুষের সাথে প্রতারণা করা

৩৬. মিথ্যা ক্বসম করে পণ্য বিক্রয় করা

৩৭. অন্যায় উদ্দেশে পণ্য মজুদ করা

৩৮. মিথ্যা শপথ করা

৩৯. দোষ গোপন ও মিথ্যা কথা বলে পণ্য বিক্রয় করা

৪০. হারাম ব্যবসা করা

৪১. যুলুম করে (অন্যায়ভাবে) কোন কিছু গ্রহণ করা

৪২. সাক্ষ্য গোপন করা

৪৩. জমিনের সীমানা/খুঁটি অন্যায়ভাবে পরিবর্তন করা

🔴 পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়ক কাবীরা গুনাহ:

৪৪. অধীনদের ওপর অত্যাচার করা

৪৫. পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া

৪৬. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা

৪৭. কারো বংশ নিয়ে কটাক্ষ করা

৪৮. বিনা কারণে মুসলিমের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা

৪৯. মন্দ নামে ডাকা

৫০. প্রতিবেশীর সাথে দুর্ব্যবহার করা

৫১. মানুষকে কষ্ট দেয়া

৫২. এমন কথা বলা যা বললে আল্লাহ তা‘আলা রাগান্বিত হন

৫৩. মুসলিমকে কাফির বলা

৫৪. বিনা প্রয়োজনে ভিক্ষাবৃত্তি করা

৫৫. স্বামীর অবাধ্য হওয়া

৫৬. স্ত্রীর ওপর অত্যাচার করা

৫৭. স্বামীর ডাকে সাড়া না দেয়া

৫৮. মুত্‘আহ্ (সাময়িক চুক্তিভিত্তিক)বিবাহ করা

৫৯. গায়রে মাহরাম (যাদের সাথে বিবাহ বৈধ) মহিলার সাথে বিবাহহীন অবস্থায় নির্জনে অবস্থান করা

৬০. সন্তানদের মাঝে সমতা বিধান না করা

৬১. দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করা

🔴 জবান ও চরিত্রসংশ্লিষ্ট কাবীরা গুনাহ:

৬২. মিথ্যা বলা

৬৩. সতী-সাধ্বী নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া

৬৪. গীবত ও চোগলখোরী করা

৬৫. আমানতের খিয়ানত করা

৬৬. অভিশাপ দেয়া

৬৭. সাহাবীদেরকে গালি দেয়া

৬৮. অসমীচীন ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা

৬৯. সীমালঙ্ঘন করা

৭০. অত্যাচার ও শত্রুতা করা

৭১. মারাত্মক ঝগড়া বিবাদ করা

৭২. অশ্রাব্য গালিগালাজ করা

৭৩. হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করা

৭৪. গর্ব ও অহংকার করা

৭৫. কৃপণতা করা

৭৬. বাড়াবাড়ি করা

৭৭. বিশ্বাসঘাতকতা করা

৭৮. অপকৌশল ও ঠকবাজি করা

৭৯. অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা করা

৮০. আত্মহত্যা করা

৮১. অপচয় করা

৮২. অপব্যয় করা

৮৩. স্বেচ্ছাচারিতা করা

৮৪. গোয়েন্দাগিরি করা

৮৫. অন্যায়ভাবে রাগান্বিত হওয়া

৮৬. অশ্লীল ভাষায় কথা বলা

৮৭. আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিরাপদ মনে করা

৮৮. আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া

৮৯. অপরের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা

৯০. উপকার করে খোঁটা দেয়া

৯১. আল্লাহর ওয়ালীদের সাথে শত্রুতা করা

৯২. আল্লাহর শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব করা

৯৩. হারামের মধ্যে ডুবে থাকা

৯৪. ওয়াদা ভঙ্গ করা

৯৫. মাদকাসক্ত হওয়া

৯৬. যিনা বা ব্যভিচার করা

৯৭. সমকামিতায় লিপ্ত হওয়া

৯৮. চুরি করা

৯৯. ডাকাতি করা

১০০. চেহারায় দাগ কাটা ও চিহ্ন দেয়া

১০১. সোনা-রূপার পাত্রে পানাহার করা

১০২. পুরুষের রেশম বা স্বর্ণের পোশাক পরিধান করা

১০৩. অস্ত্র দিয়ে কারো দিকে ইশারা করা

১০৪. জানা সত্ত্বেও অন্যকে পিতা দাবী করা

১০৫. বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ ও বাজনা শোনা

১০৬. কবরের উপর বসা

১০৭. টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়া

১০৮. পুরুষদের মহিলার বেশ এবং মহিলাদের পুরুষদের বেশ ধারণ করা

১০৯. ছায়ায় ও রাস্তায় প্রসাব-পায়খানা করা

১১০. মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কোন জন্তুকে আটকে রাখা

১১১. কোন জন্তুকে তীর বা গুলি লাগানোর ট্রেনিং-এর লক্ষ্য বস্তু বানানো

১১২. বিনা কারণে কুকুর পোষা

১১৩. মৃত জন্তু ও রক্ত খাওয়া

~ শাহাদাত হুসাইন খান ফয়সাল রহিমাহুল্লাহ (গুনাহ মাফের উপায়)